ধূমপান করে নিজের মরণ নিজেই ডেকে আনছেন না তো ? তাহলে ধূমপান আজই বন্ধ করুন। আমরা সবাই জানি যে, ধূমপান স্বাস্থের পক্ষে কতটা ক্ষতি। প্রত্যেকটা সিগারেটের প্যাকেট এবং অন্যান্য নেশাদ্রব্যের মোড়কে স্পষ্ট করে লিখা থাকে এটি স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক। তারপরও আমরা সবকিছু জেনে শুনেও ধূমপান করি।
![ধূমপান হলো একটি মরণ ফাঁদ-এর থেকে বাঁচার উপায়](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgUw5IwHcTEpJaZkF4QXbIj2R4BtFEIlaVP6eXEBnGbGr8OblQ4xqvV-pzS0hVLILKcGmyyiCTzSeKRZm-eEQOCwfatIDBAtnuuEY-U3af9t5VvvO5gz1WzLfvC8ulOYvB-aNtxOHfWTdsIUsuCSDKj-Y4iRDReFeJBXJljoj9xcPIU9-4EPCjBJlKnVk4/s16000/%E0%A6%A7%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%8B%20%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF%20%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%20%E0%A6%AB%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%A6-%E0%A6%8F%E0%A6%B0%20%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A7%9F.jpg)
নেশা জাতীয় খাবার গুলো হল তামশিক খাবার। মদ্যপান ও ধূমপান দুটোই মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। বাংলাদেশের মানুষ যে সব জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেগুলোর বেশিরভাগ এরই উৎপত্তি হয় মদ্যপান, ধূমপান, হিরোইন, ইয়াবা, গাঁজা, জর্দা, খইনি, গুল, গুড়াখু ইত্যাদি থেকে। এ সকল তামাক জাতীয় নেশা মানুষের কর্ম ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে দ্রুত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
ধূমপান একটি মারাত্মক বদ অভ্যাস (খারাপ নেশা)। ধূমপায়ীরা অধিকাংশ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি ধীরে ধীরে মানুষের জীবণীশক্তি ক্ষীণ/শীর্ণ করে দেয়। ধূমপানাশক্ত লোকেরা নিজেই কেবল ব্যাধিগ্রস্থ হয় না অন্যরাও এর প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। একজন ধূমপায়ী বাবা-মায়ের কারণে তাদের শিশুরা সহজেই রোগাক্রান্ত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মিস্টার ‘বি’ একজন ধূমপায়ী। তার একটি কন্যার বয়স ৬ মাস। মিস্টার ‘বি’ তার বেডরুমে বসেই দৈনিক ১০/১১ টি করে সিগারেট টানেন। এর প্রভাবে ওই শিশু কন্যাটি প্রায়শ: জ্বর, শ্লেম্মা, ব্রণকাইটিস, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মিস্টার ‘বি’ আন্দাজ করতে পারেন না, তার শিশু কন্যাটি কে পুণ: পুণ: এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
“ধূমপানে বিষপাণ” এটি যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পেরে জনৈক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা নিজে (Drastically) ধূমপান বর্জন করে সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের বদ অভ্যাসগত রেকর্ড ভঙ্গঁ করত: বিস্মিত করেছিলেন। তিনি খুবই দায়িত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থাকাকালীন জটিল রোগে ভূগছিলেন। ইন্ডিয়া থেকেও সদ্য চিকিৎসা করে এসেছিলেন। একদিন সন্ধ্যায় তার সরকারি কোয়ার্টারে বসে গল্প করছিলাম। তিনি অধিক মাত্রায় ধূমপান করতেন। প্রায় চেনস্মোকার ছিলেন বলা যায়।
উচ্চ পদস্থ কর্মচারী, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়ী প্রভৃতি ব্যক্তিগণ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রায়শই মানসিক চাপে থাকেন। মানসিক চাপ থেকে রিলাক্স হবার জন্য এসব লোকেরা ধূমপানের মত বদ অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। আমি বেশ কিছুদিন থেকে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার কথাটি উপরোক্ত সরকারি কর্মকর্তাকে বলবো বলবো ভাবছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে তাকে বলতে আমার সংকোচ বোধ হচ্ছিল। কিন্তু সেদিন এ বিষয়ে তাঁকে না বলে থাকতে পারলাম না। বললাম, স্যার একটা বিষয়ে আমার নিকট প্রমিজ করতে হবে।
তিনি বললেন কি বিষয়ে বলুন। আমি বললাম, You must try to give up the bad habit of smoking. ধুমপান করতে থাকলে আপনার স্বাস্থ্যগত জটিলতা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকবে।
তিনি বললেন, আপনার উপদেশ আমি গ্রহণ করলাম। যদিও এটি ছেড়ে দেবো বলে পূর্বেই ভেবেছি। কিন্তু ছাড়তে পারছিনা।
ধূমপান ছাড়ার উপায়
ধূমপান ছাড়ার জন্য আপনার মানসিক দৃঢ় ইচ্ছাই (Mental Strong will Force) যথেষ্ট। আপনাকে মনে মনে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে এ মর্মে যে, এখনই আমি ধূমপান ছেড়ে দেবো। যদি প্রতিজ্ঞা করার পরেও প্রতিজ্ঞা পালনে আপনি: ব্যর্থ হন তা হলে মহান আল্লাহর নামে ওয়াদা করতে হবে এই বলে যে, এটি পুনরায় মুখে নিলে হারাম পাণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বীয় ধূমপান পরিত্যাগের অভিজ্ঞতার আলোকেই আমি তাকে উক্তরুপ প্রতিজ্ঞা পালনের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। এরপর বেশ কিছুদিন চলে যায়, এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আর কোন আলাপ হয়নি। কয়েক মাস পর জানলাম তাঁর প্রমোশনে ট্রান্সফার অর্ডার হয়েছ। তার বিদায় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। ওই অনুষ্ঠানে একজন অফিসার তার বক্তব্যের মাঝে এ মর্মে জানালেন যে, একটা আশ্চর্য ও আনন্দের খবর হল স্যার কিছুদিন হলো দ্রুত মানসিকতা নিয়ে ধূমপারে ছেড়ে দিয়েছেন। তার মত একজন চেইন স্মোকার দ্রুত এ বদ নেশাটি ছেড়ে দেওয়ার সংবাদ উপস্থিত সকলকে বিস্মিত করেছিল। ধূমপাইদের নিকট এটি একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য আর একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব এ ডি এম এর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকাকালীন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মাৎ অকাল মৃত্যুর শিকার হন। উনি একজন চেইন স্মোকার ছিলেন। ধূমপানের মতো বদ নেশায় আসক্ত হয়ে আমাদের দেশে অনেক উজ্জ্বল প্রদীপ অকালে নিভে যায়।
বাংলাদেশের শুধু তামাক জাতীয় দ্রব্য-শোবনের জন্য প্রতি দু-মিনিটে একজন, প্রতি ঘন্টায় ২৮ জন এবং প্রতিদিন গড়ে ৬৮০ জন মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। এভাবে এক বছরে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। গোটা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের দাম সস্তা। ২০০৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ে জরিপ করেছিলেন। সেই জরিপের পরিসংখ্যান অনুসারে তামাক জনিত কারণে এদেশে বছরে ৫৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বর্তমান হিসেবে বছরের এই সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। এ দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ তামাকের কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লেখকঃ ধূমপানে বিষ পান
লেখক (১৯৫৫ সালের ২ রা জানুয়ারী) রাজশাহী জেলার অন্তর্গত তানোর থানাধীন তালন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা স্বর্গীয় পন্ডিত প্রভাস চন্দ্র বিশ্বাস (পুরানরত্ন) একজন সুশিক্ষক ছিলেন। মাতার নাম শান্তি লতা বিশ্বাস। লেখকের শৈশবের ডাকনাম ‘কাজল’।
প্রতিবেশী মাতৃস্থানীয়রা তাঁকে আদর করে ‘কাজল’ নামে ডাকতেন। লেখক মায়ের নিকট থেকে বর্ণপরিচয় শিখে তানোর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করে তানোর জুনিয়র স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর সরনজাই উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে গোল্লাপাড়া (তানোর) থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার গ্রীষ্মে উত্তপ্ত ও বর্ষায় কর্দমাক্ত রাস্তা হেঁটে এবং সাইকেল যোগে স্কুলে যেতেন। ১৯৭০ সালে সরনজাই উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পরীক্ষায় সুনামের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭২ সালে রাজশাহী সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (অর্থনীতি) বিভাগে প্রথম বর্ষ সম্মানে ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৭৭ সালে এম.এ (অর্থনীতি) পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৯ সালে ‘রাজশাহী আইন মহাবিদ্যালয়’ থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। লেখক ১৯৮০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১ই জানুয়ারি পর্যন্ত তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রী কলেজে ( তানোর রাজশাহী) অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষাদানের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তার লেখা পাঠ্যবই ‘স্নাতক ব্যষ্টিক অর্থনীতি’।
উল্লেখ্য, লেখকের জামাতা গৌতম সিংহ (পুত্রবৎ) রাজশাহী কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক এবং একমাত্র কন্যা সম্পা বিশ্বাস রাজশাহী মহানগরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত আছেন।
কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url