রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা - রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার

আমরা অনেকেই জানিনা রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা ও রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার সম্পর্কে। খাবারের পাশাপাশি রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তাই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও আপনাদেরকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

মধু হচ্ছে এক প্রকারের মিষ্টি পদার্থ যা মৌমাছি ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। এটি একটি উচ্চ ওষুধি গুণ সম্পন্ন তরল খাবার যা আমাদের শরীরের জন্য প্রচন্ড উপকারী সেইসাথে এই মধু বর্তমানে রূপচর্চায় ব্যবহার করা হয় ব্যাপকভাবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা - রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার

রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা 

সাধারণত আমরা শুধু খাওয়ার ক্ষেত্রে মধু ব্যবহার করে থাকি। রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার করা হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমরা জানব রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা। মধুতে এমন সব উপাদান রয়েছে যা শুষ্ক ও তৈলাক্ত দুই ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম জিংক লৌহ পটাশিয়াম ইত্যাদি। এটি উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি খাবার যা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

ত্বক পরিষ্কারক হিসেবেও মধু ব্যবহার করা যায়। কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভিজিয়ে আধা চামচ মধু নিয়ে মুখে মালিশ করুন এবং ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, এন্টিসেপটিক যা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন চুল ঘন করার উপায় ৭ দিনে

রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা রয়েছে অনেক। যেমন বয়সের ছাপ দূর করতে মধু কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুষ্টি উপাদান যা ত্বকের বয়সের ছাপ কমিয়ে দেয় সেই সাথে ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। মধু ত্বক কে তৈলাক্ত করে না বরং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে ত্বককে মসৃণ টান টান ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন যাদের অ্যালার্জির সমস্যা তাদের মধু ব্যবহার না করাই ভালো। যদি করতে হয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।

রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার 

রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা সম্বন্ধে তো জানতে পারলাম কিন্তু আমাদের অনেকের প্রশ্ন রূপচর্চায় কিভাবে মধু ব্যবহার করব? রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা ও  রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার  কিভাবে করব? আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমরা জানব রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত।

প্রাচীন যুগ থেকে রূপচর্চায় মধু ব্যবহার হয়ে আসছে ব্যাপকভাবে। ত্বকের দাগ দূর করতে ত্বকের মসৃণতা বাড়াতে মধুর কোন বিকল্প নেই। আকর্ষণীয় ও কোমল ত্বক পেতে আমরা অনেকেই মধুর উপর নির্ভর করে থাকি। এটি একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

আরো পড়ুন ১৫ টি উপায়ে যেভাবে লম্বা হওয়া যায়

মধু খুব ভালো একটা প্রাকৃতিক ক্লিনজার যা আমাদের ত্বকের মরা কোষ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ভিতরে জমে থাকা ময়লা বের করে নিয়ে আসে। মধু দিয়ে নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করলে আমাদের ত্বক হয়ে উঠবে সুন্দর দাগহীন উজ্জ্বল। এক চামচ মধু, লেবুর রস, কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে মুখে মেসেজ করুন। কিছুক্ষণ রাখুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে আপনি হেলদি একটা স্কিন পাবেন।

এক চামচ চিনি সাথে দুই চামচ মধু মিশিয়ে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে স্ক্রাব বানাতে পারেন। এই স্ক্রাব মুখে দুই থেকে তিন মিনিট হালকাভাবে মেসেজ করুন। লেবু ত্বকের দাগ দূর করে আর মধু ত্বকের পুষ্টি যোগায় যোগাতে সাহায্য করে ফলস্বরূপ আপনি পাবেন নরম উজ্জ্বল মসৃণ ত্বক।

অলিভ অয়েল টকদই এবং সাথে মধু মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের হেয়ার ফলিকল উজ্জীবিত করে এবং মশ্চারাইজার করে চুলের রুক্ষভাব দূর করে চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় 

রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা ও রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার সম্পর্কে জানার পর আমরা এবারে জানবো মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়। মধু খাওয়ার সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে সকালে খালি পেটে। আমাদের অনেকেরই হজমের সমস্যা রয়েছে আপনি যদি প্রতিবার ভারী খাবার খাওয়ার আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিন তাহলে হজমের সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন। মনে রাখবেন নতুন মধু থেকে পুরাতন মধু বেশি কার্যকরী।

আরো পড়ুন মসুর ডালের ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

  • কুসুম গরম পানির সাথে দুই চামচ মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে আপনি আপনার ওজন কমাতে পারবেন। তার সাথে দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম থাকে এবং রক্তনালীর সমস্যা দূর করতে এই দুটি উপাদান খুবই কার্যকরী।
  • মধুর সাথে তুলসী পাতার রস খেলে অল্প কিছু সময়ের মধ্যে কাশি দূর হয়ে যায়।
  • আম গাছের কচি চামড়া কচি বেল এর সঙ্গে মধু ও গুড় মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভাল হয়।
  • এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ আদার রস একসঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা খেলে সর্দিও সেরে যাবে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পাবে।
  • মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার ফলে নিয়মিত আপনি যদি মধু খান তাহলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
  • মধু আমাদের শরীরের হজম শক্তি বাড়াতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

মনে রাখবেন যে মধু যত বেশি গাড়ো হবে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ ততই বেশি হবে তাই কেনার ক্ষেত্রে আপনারা সচেতন হন।

মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় 

রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা আর্টিকেলটিতে এবারে আমরা জানবো মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়। তৈলাক্ত ত্বকে তুলসী পাতা আর মধু মেশানো ফেসপ্যাকটি ত্বক ফর্সা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক কাপ তুলসী পাতা নিন বেটে রস বের করুন সেই সাথে মধু মিশিয়ে আপনার মুখে এপ্লাই করুন। ইচ্ছা করলে এর সাথে বেসন বা মুলতানি মাটি যোগ করতে পারেন সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করুন। এই মিশ্রণটি আপনার ত্বকের ব্রণ হওয়ার উপদ্রব কমাবে এবং নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক ফর্সা করবে।

শুষ্ক ত্বকে মধুর সাথে পুদিনা পাতার রস মিক্স করে এর সাথে ইচ্ছা করলে চন্দনগুঁড়ো নিতে পারেন। এক্ষেত্রে চন্দনগুঁড়ো কিছুটা সময় ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার এই তিন উপাদান একসাথে নিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ফেসপ্যাকটি ত্বকের কালচে ভাব দূর করবে ত্বকে উজ্জ্বলতা নিয়ে আসবে।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে মধু  

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মধু একটু সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। এর সঠিক ব্যবহার না হলে দেখা যাবে ব্রণে মুখ ভরে গেছে। মধু দিয়ে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কিভাবে করবেন এখন তা জানাবো। মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন এরপর লেবুর রস এবং মধু একসাথে মিশান। এই মিশ্রণটি মুখে এপ্লাই করুন। ৫ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ত্বক ব্রণ থেকে রক্ষা করবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। ভালো ফলাফল পেতে আপনি এই প্যাকটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম 

মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত এর নাম হচ্ছে মধু। মধুতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের খনিজ, ভিটামিন, এমিনো এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পবিত্র কুরআনে রোগ নিরাময়ের উৎস হিসেবে মধুর কথা বলা হয়েছে।

ইসলামে বলা হয়েছে সকালে ঘুম থেকে উঠে এক চামচ মধু খেলে কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রিয় পাঠক আশা করছি রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা ও  রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আর্টিকেলটি পড়ে আশা করছি আপনারা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন এবং অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি নিয়ে যদি আপনাদের কিছু জানার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ। ২৩২৬১


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url