চিরতরে ঠোঁট ফাটা দূর করুন

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জন্য কিভাবে চিরতরে ঠোঁট ফাটা দূর করবেন তার সহজ ও কার্যকরী টিপস নিয়ে আলোচনা করবো। বর্তমান সময়ে ঠান্ডা এবং গরম এই দুই মৌসুমেই অনেকেই আছেন যাদের ঠোঁট ফাটে। ঠোঁট ফাটা আমাদের যেন একটা বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আপনি যদি চিরতরে ঠোঁট ফাটা দূর করতে চান তাহলে আমাদের এই পোস্টটি খুব মনোযোগ সহাকারে পড়ুন।

শরীর পুরোপুরি সুস্থ রাখতে শুধু যে শরীরকে সবল রাখা তা নয় কিন্তু ! শরীরকে স্ট্রং ও পুরোপুরি সুস্থ সবল রাখার জন্য শরীরের অন্যান্য দিকেও খিয়াল রাখতে হবে। যেমন- একজন মানুষের দেহে পুষ্টির অভাবে তার কিন্তু ঠোঁট ফাটতে পারে। কি করলে চিরতরে ঠোঁট ফাটা দূর করতে পারবেন তা নিয়ে নিম্নে পঠিত করা হলো:

এক্সফলিয়েট করুন- ঠোঁট ফাটার হাত থেকে বাঁচতে ঃ   

একটা নরম টুথব্রাশ বা পাতলা সাদা কাপড়ের টুকরা ভিজিয়ে ঠোঁটের উপর আলতো করে ঘষে নিন। খেয়াল রাখবেন যেন বেশি জোরে ঘষা না লাগে। বেশি জোরে ঘষা লাগলে ঠোঁট আরও বেশি ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। চেষ্টা করবেন- ঠোঁট আলতো করে ঘষার, আলতো করে ঘষলে ঠোঁটের মৃত চামড়া উঠে ক্লিন হয়ে যাবে। এভাবে সপ্তাহে অন্তত  একবার ঠোঁট এক্সফলিয়েট করুন।   

এছাড়াও ঠোঁট ফাটা রোধ করতে সুষম খাবার গ্রহন করুনঃ 

ঠোঁট ফাটার সবচেয়ে অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। বেশি পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করুন।


চর্বি বা চর্বিজাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিন। বাইরের তেলে ভাজা খাবার খাদ্যতালিকা থেকে একেবারেই বাদ দিতে হবে। ফাস্ট ফুড যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। দুইবেলার মধ্যবর্তী সময়ে খিদে পেলে পপকর্ন, ফল বা ফলের জুস খেতে পারেন।  

পর্যাপ্ত বিশ্রাম 

শরীর পুরোপুরি সুস্থ ও সবল রাখতে দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন

দিনে কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে এর বেশি ঘুমালে আপনার শরীর অলস হয়ে যাবে। দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস পরিহার করুন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত ঘুম আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিয়ম মেনে রাতে জলদি ঘুমাতে যান ও ভোরবেলা উঠে পড়ুন।

পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করুন

আমাদের ঠোঁটে কোনো তৈলগ্রন্থি থাকে না। যে কারণে ঠোঁট খুব সহজেই শুকিয়ে যায়। এই সমস্যা এড়াতে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। কিন্তু শীতের সময়ে অনেকে পানি পান করার পরিমান কমিয়ে দেন। এমনটা কখনোই করা যাবে না। সেইসঙ্গে ছাড়তে হবে ঠোঁট চাটার বাজে অভ্যাস। এই অভ্যাসের কারনে ঠোঁট আরও বেশি শুকিয়ে যায়। দিনে অন্তত ৬-৭ লিটার পানি পান করার চেষ্টা করুন। দেখবেন অনেকাংশেই আপনার ঠোঁট ফাটা কমে যাবে।

 প্রচুর পানি পান করার চেষ্টা করুন 

পরিমাণমতো এক ঘণ্টা অন্তর অন্তর পানি পান করুন। পানি আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দেয়। ফলে ঠোঁট ফাটার ভয় অনেকাংশেই দূর হয়ে যায়। এ ছাড়া পানি আমাদের ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পানি রাখুন এবং নিয়ম মেনে তা পান করুন।

রঙিন সালাদ

খাদ্যতালিকায় রাখুন বিভিন্ন রঙের সবজি বা ফল দিয়ে তৈরি সালাদ। এ সালাদের সঙ্গে টক দই মেশাতে পারেন। এতে উপকার পাবেন।

সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

বাইরে কোথাও বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। কারন সূর্যরশ্মির প্রভাবেও ঠোঁটের ক্ষতি হতে পারে। মুখ মাস্কে ঢাকা থাকলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এতে করে ঠোঁট সুরক্ষিত রাখা অনেকটাই সহজ হবে। কিন্তু সানস্ক্রিন এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পরিমান মতো ব্যবহার করতে হবে। 

ঠোঁটের স্ক্রাবার, ক্রিম ব্যবহার করুন

মুখে মাখার স্ক্রাবার বা ক্রিম ঠোঁটে ব্যবহার করবেন না। ঠোঁটের জন্য আলাদা স্ক্রাবার বা ক্রিম কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো কিনে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। বডি লোশন বা ময়েশ্চারাইজার ঠোঁটে না দেওয়াটাই উত্তম। 

ঠোঁট ফাটা দূর করতে লিপবাম ব্যবহার করুন 

ফাটা ঠোঁটের সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র লিপবাম। এই জন্য যখন দেখবেন যে আপনার ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে তখন লিপবাম ব্যবহার করবেন। <SPF> লিপবাম ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। দিনে অন্তত প্রতি দু’ঘন্টা অন্তর অন্তর লিপবাম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। খাওয়ার শেষে এবং মুখ ধোওয়ার পর লিপবাম লাগিয়ে নিবেন। এতে অনেকটাই উপকার পাবেন।   



ঠোঁট ফাটা রোধ করতে আরো কিছু বিকল্প পথঃ  

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে কখনো কখনো রক্তও বের হয়। তবে শীতকালেই যে ঠোঁট ফাটে এমনটি নয়, বরং গরমকালেও নানা কারণে ঠোঁট ফাটতে পারে। অনেক সময় গরমকালে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি লাগার কারণে ঠোঁটের ত্বক শুকনো হয়ে যায়। আর তার ফলেই ঠোঁট ফাটার সমস্যা দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, শরীরে পানির ঘাটতি পড়লেও ঠোঁট ফাটে। যা উপরে আরো ভালো করেই েআলোচনা করা আছে। 
এ সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে কার্যকারী পদ্ধতি হলো নারিকেল তেল উপাদানবিশিষ্ট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। গরমের সময় ঘাম থেকে পানি বেরিয়ে যায়। যার ফলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। তাই অল্পেই ডিহাইড্রেশনের শিকার হতে হয় গ্রীষ্মকালে।

>>আরো পড়ুনঃ লিভার  ক্যান্সারের ঔষুধ  

আর ডিহাইড্রেশনের কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। যার ফলে ঠোঁট ফাটতে থাকে। শরীর ও ঠোঁট হাইড্রে রাখতে সারা দিনে প্রচুর পানি পান করতে হবে। ঠোঁট চাটবেন না— কথায় কথায় জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটবেন না। ঠোঁট চাটলে আরও বেশি রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। শুষ্ক, খসখসে ভাব অনুভব করলে লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা উচিত ।

সূর্যের আলো থেকে মুখ ও ঠোঁটকে ছায়া দেওয়ার জন্য টুপি অথবা মাস্ক ব্যবহার করুন। এসব খাবার এড়িয়ে চলুন— অতিরিক্ত মসলাদার খাবার খাওয়া ঠোঁটের অবস্থা আরও খারাপ করে তুলতে পারে। যার ফলে ঠোঁট ফাটতে পারে। তাই যতটা সম্ভব এসব খাবার এড়িয়ে চলুন। গ্রীষ্মকালে অনেকেই দিনের বেশিরভাগ সময় এয়ারকন্ডিশন রুমে কাটান।

এসির ঠাণ্ডা বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ একেবারেই থাকে না। এসি ঘরের শুকনো বাতাস আমাদের ত্বক থেকেও স্বাভাবিক আর্দ্রতা শুষে নিতে শুরু করে। একটানা এসির ঠাণ্ডা হাওয়ায় থাকতে থাকতে হাত, পা, মুখ অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। যার ফলে ঠোঁট ফাটতে শুরু করে। তাই বাতাসে আর্দ্রতা ফেরাতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন। এটি শুষ্কতা প্রতিরোধে সাহায্য করবে।  

>>আরো পড়ুনঃ রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা

**আমরা সকলেই জানি যে মধু খুবই ভালো অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াজাত পদার্থ। এবং ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বককে কোমল করতে সাহায্য করে, ত্বকের শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে রোধ করে। এই দুটো জিনিস যদি একসঙ্গে ঠোঁটে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা ঠোঁটের জন্য উপকারীও হবে আবার ঠোঁট ফাটার সমস্যা থেকেও রেহাই মিলবে।
**অ্যালোভেরা সবসময়েই ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। অ্যালোভেরা শুষ্ক ঠোঁটকে নমনীয় করতেও সাহায্য করে। রোজ ঠোঁটে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে শুষ্ক ঠোঁটের সমস্যা দূর হয়।
**ঠোঁট ফাটার সমস্যা দূর করতে অলিভ বা জলপাইয়ের তেলও খুবই উপকারী। দিনে ২ বার করে ঠোঁটে জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করলে ঠোঁট কোমল এবং নমনীয় থাকে।
**নারকেল তেলে প্রচুর পরিমানে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই ঠোঁটকে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচাতে প্রত্যেকদিন ঠোঁটে নারকেল তেল ব্যবহার করুন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ঠোঁট ফাটে। ঠোঁট সামান্য শুষ্ক হলে অনেকে জিব দিয়ে ভেজানোর চেষ্টা করেন। এতে স্যালাইভা শুকিয়ে যায়। ফলে ঠোঁট আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং ফেটে যায়।  তাই কখনোই জিহ্বা দিয়ে ঠোট চাটা যাবে না। 

নিয়মিত ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে ব্যবহার করুন গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণ। এতে করে আপনার ঠোঁট আরো তুলতুলে ও নরম হয়ে উঠবে।  

শেষ কথাঃ চিরতরে ঠোঁট ফাটা দূর করুন 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাহিরের বিভিন্ন দোকানে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার  খেয়ে থাকি। যেগুলো মুখরোচক হলেও এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এইসব খাবার খাওয়ার কারনেও ত্বকের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। তাই এসব খাবার বর্জন করতে হবে। এবং বেশি বেশি করে পানি পান করতে হবে। চেষ্টা করবেন উপরে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা সঠিক ভাবে পালন করলে আপনার ঠোঁট ফাটা থেকে আপনি অনেকটাই রক্ষা পাইতে পারবেন।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url